শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৮

স্যমন্তক রিভিউ (২) / এরশাদ হোসাইন আবীর


রিভিউ টাইটেল-ভাইভা রিভিউ

স্যমন্তক ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি অসাধাণ উপন্যাস। যে উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বোদ্ধামহলে রীতিমতো সাড়া পড়ে গিয়েছিল। বইটি প্রকাশ করছেন, পুথিনিলয়, বাংলা বাজার, ঢাকা। আমি ইতোঃপূর্বে বইয়ের কয়েকটি অধ্যায় নিয়ে একটি বিভিউ লিখেছিলাম। এর ধারাবাহিকতায় এটি দ্বিতীয়। তাহলে যাওয়া যাক রিভিউতে।

ভাইভা শুনলে মনের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ভাইভা বোর্ড মানেই যেন যমদূতের সামনে নিজেকে
শপে দেয়া। জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে লাফ দিয়ে আগুনে দগ্ধ হওয়া! যারা ভাইভার মুখোমুখি হন  তাদের সবার মনেই এমন একটি আতঙ্কের ছবি অনেক দিন জমে থাকে স্যমন্তক উপন্যাসে এমন একটি ভাইভা রয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় স্যমন্তকের নায়িকা রচনা ৯৮ নাম্বার পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। তাই রচনাকে ভাইভাতে ঘায়েল করার একটি পরিকল্পনা করে ভাইভা বোর্ড! লেখকের ভাষায়- মেয়েটাকে(রচনা) ভাইভাতে ভালোভাবে ঝাকিঁয়ে নিতে হবে। দেখব ঘাম কত ঝরে। পৃথিবীতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টির জন্য যে রচনার জন্ম তিনি কি আর সামন্য ভাইভাতে কুপোকাত হন। উল্টো ঘাম ঝরিয়ে ছাড়ে ভাইভা বোর্ডকে!

ভাইভা শুরু হয়। সবার শেষে ডাক পড়ে রচনার। এটি পরিকল্পনার অংশ। শেষে ডাকলে দীর্ঘ সময় ঝাকিয়েঁ নেওয়া যাবে। রুমে ঢুকে মেয়েটি ভাইভা বোর্ডের সবাইকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্ধারিত চেয়ারে বসে পড়ল
আমরা হলে কী করতাম? ভাইভা বোর্ডে ঢুকে অনুমতি চেয়ে চেয়ারে বসতে হয়। কিন্তু রচনা অন্য ধাতুতে গড়া। কাউকে কিছু না বলেই চেয়ারে বসে পড়ল! এমন ভুলের জন্যই যেন অপেক্ষায় ছিল ভাইভা বোর্ড! এমন মোক্ষম সুযোগ হাত ছাড়া করেনি ভাইভা বোর্ডের পরীক্ষকবৃন্দ। কী হলো তখন! এখানেই আসল রহস্য, আসল মজা।

লেখকের ভাষায়-খান স্যার( ভাইভা বোর্ডের প্রধান) গম্ভীর গলায় কিছুটা শ্লেষ ঢেলে বললেন, অনুমতি না নিয়ে বেয়াদবের মতো বসে পড়লে যেআমরা হলে হয়তো এমন প্রশ্নের পর বুকে কাপঁন ধরে যেতে। কিন্তু যে রচনা! অনন্য রচনা। এমন প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দিতে হয় তারঁ ভালোই জানা আছে। 

যেভাবে উত্তর দিল স্যমন্তকের নায়িকা রচনা-  বিনীত গলায় বলল, আমি জানি কোথায় কখন কী করতে
হবে। সাক্ষাৎকার প্রার্থীর জন্য নির্ধারিত চেয়ারে আমি বসেছি। এখানে কেবল একটা চেয়ার খালি রাখা হয়েছে। পূর্ব - নির্ধারিত বিষয় নিয়ে যদি আপনার নির্দেশনার অপেক্ষায় সময়ক্ষেপন করি তাহলে এত কষ্ট করে যাচাই - বাছায়ের প্রয়োজন কী? যে কোন একজনকে নিয়োগ দিলেই হয়!

এমন উত্তর ভাইভা বোর্ডে অবিশ্বাস্য! লেখকও ভাইভা বোর্ডের একজন পরীক্ষক। লেখক মনে করেছিলেন রচনাকে না খান স্যার বের করে দেবেন।না তিনি তা করেননি। পরের প্রশ্ন - তুমি কে?

রচনার উত্তর - আমি একজন মানুষ, একজন মেয়ে, একজন বাংলাদেশি, একজন ছাত্রী, একজন চাকরিপ্রার্থী, একজন সাক্ষারকারপ্রার্থী,...................
অসাধারণ উত্তর

পরের প্রশ্ন - তোমার প্রিয় ব্যক্তি
এমন প্রশ্নের উত্তরে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম বলা যৌক্তিক মনে করি। রচনা তা মনে করেন না। তাঁর উত্তর - আমি নিজেই। রচনা নিজে নিজের প্রিয়। 

: তুমি ছাড়া?

রচনার উত্তর - আপনি! প্রশ্নকর্তা খান স্যারকে নির্দেশ করে। এমন উত্তর হলে হয়তো অন্যকোন প্রশ্নকর্তা খুশি হতেন। খান স্যার বললেন, তোষামোদের জায়গা পাও না!
রচনার উত্তর- প্রথম উত্তরটাই আমাকে বের করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। আপনি তেমন করেননি। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর আমি প্যাঁচিয়ে ফেলেছি। তারপরও আপনি রাগ করেননি। এত মর্যদাসম্পন্ন চেয়ারে থেকেও আপনার বিবেচনাবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে
যুদ্ধ শান্তির মধ্যে তফাত কী? ভাইভা বোর্ডের আর একটি প্রশ্ন
আমরা হলে যুদ্ধ কাকে বলেশান্তি কাকে বলে ইত্যাদি নিয়ে উঠে পড়ে লাগতাম উত্তর দিতে। রচনা তা করেনি। রচনার উত্তরটি ছিল গভীর প্রজ্ঞাময়।রচনার উত্তর- যুদ্ধের সময় পিতাকে সন্তানের লাশ বহন করতে হয়, শান্তির সময় সন্তানই পিতার লাশ বহন করে। 
কতটা জ্ঞানী হলে এমন উত্তর দেয়া যায়!
যুদ্ধ করে যুবকরা। বৃদ্ধদের কেউ যুদ্ধে যায় না। যুদ্ধে কেউ মারা গেলে যুবকরাই মরবে তাই কোন যুবকের মৃত্যু হলে তার পিতাকেই লাশটি বহন করে নিয়ে যেতে হয়! পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ এর চেয়ে কষ্টের, এমন অশান্তির সময় আর কিছু হতেই পারে না। এমন  শৈল্পিক, সুন্দর উত্তর রচনা ছাড়া কেউ দিতে পারত বলে মনে হয় না। 
স্যমন্তক উপন্যাসটি এমনই। যেখানে একটি সাক্ষাৎকারের আলোচনা হয়ে উঠে অনন্য। শুধু রচনার কল্যাণে।  সাক্ষাৎকার শেষে বোর্ড কর্তাদের মূল্যায়ন লেখকের ভাষায়- এমন মেধাবী মেয়ে দেখিনি। সনদ ইন্টারের কিন্তু মেধা? ওহ মাই গড, তারঁ পুরো শরীরটা যেন মাথা।  কথা নয় যেন বৃষ্টির আওয়াজ, কী অঝোরে ঝরিয়ে গেল

যাকেঁ সাক্ষাৎকারের পূর্বে হেনেস্ত করে ঘাম ঝরানোর পরিকল্পনা করেছিল পরীক্ষকেরা সেখানে সাক্ষাৎকারের পরে উল্টো ঘাম ঝরলো পরীক্ষকদের। যেন রচনার সাক্ষাৎকার শেষ হলে বেচেঁ যায় ভাইভা বোর্ড
কী হলো তারপর.................. তারপর কী হলো তা, পরবর্তী রিভিউতে জানতে পারবেন কী হলো!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন