শনিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৮

স্যমন্তক একটি পরিপূর্ণ উপন্যাস / হায়াৎ মামুদ


উপন্যাস নির্মল আনন্দের উৎস। তাই সাহিত্যজগতে উপন্যাস সবচেয়ে জনপ্রিয়। কোনো কোনো উপন্যাস পাঠকের
মনে গভীর দাগ কাটে। উপন্যাসের অচেনা-অজানা চরিত্রসমূহে মনপ্রাণ একাকার হয়ে যায়। গভীর নিবেশে আবেশিত হয়ে ওঠে হৃদয়। ব্যক্তিগতভাবে অচেনা চরিত্রগুলোও ভাবনায় শিহরণ তোলে। যদি আপনি এমন একটা উপন্যাস পড়েন, যার প্রায় সবকটি চরিত্র পরিচিত, শ্রদ্ধার্হ, খ্যাতিমান ও প্রিয়- তাহলে কেমন লাগবে? কেমন শিহরিত আনন্দে কেঁপে উঠবে অনুভূতি? এমন বিবরণ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তবে, স্যমন্তক উপন্যাস পড়লে এরূপ বিরল অনুভূতির পুরোটাই আস্বাদন করতে পারবেন। পরিচিত চরিত্রসমূহের বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ আর মনলোভা আচরণ ‘স্যমন্তক’ উপন্যাসের অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিটি লাইনই মুখস্থ করে রাখার মতো। অন্তত এজন্য হলেও ড. মোহাম্মদ আমনের স্যমন্তক উপন্যসটি পড়ে  দেখতে পারেন।

স্যমন্তক কোনো সাধারণ উপন্যাস নয়। বাস্তবতার নিরিখে রচিত এ উপন্যাসের শৈল্পিক বিবরণ বস্তি হতে রাজপ্রসাদ পর্যন্ত বিস্তৃত।  প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং নব্বইয়ের দশকে বাংলা সাহিত্যের উদীয়মান অধিকাংশ সাহিত্যিক, শিক্ষক, প্রশাসক ও বুদ্ধিজীবী স্যমন্তকের চরিত্র। উদাহরণস্বরূপ জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, কবীর চৌধুরী, হাসনাত আবদুল হাই, হুমায়ুন আযাদ, শিল্পী এস এম সুলতান, আলাউদ্দিন আল আযাদ, ইতিহাসবেত্তা আবদুল হক,
স্যামন্তক পড়ছেন হায়াৎ মামুদ
মনিরুজ্জামান, আনিসুজ্জামান, হায়াৎ মামুদ, অরুণাভ সরকার, নরেন বিশ্বাস, দেলোয়ার হোসেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, আহমদ ছফা প্রমূখের নাম উল্লেখ করা যায়। অবিশ্বাস্য প্রতিভার অধিকারী আমার একজন ছাত্রী স্যমন্তকের নায়িকা। বস্তিতে  বেড়ে ওঠা এ মেয়েটা এখন অক্সফোর্ডের অধ্যাপক। বস্তি থেকে অক্সফোর্ড- কীভাবে সম্ভব হলো? বস্তুত এর অনাস্বাদিতপূর্ব বিবরণই স্যমন্তক। স্যমন্তকরূপী নায়কের সহচর্যও এমন বিরল ঘটনা ঘটিয়েছে।

স্যমন্তক কী ধরণের উপন্যাস? নানামুনির নানা মত। কেউ বলেন, মনস্তত্বমূলক উপন্যাস। কেউ বলেছেন, আত্মজীবনীমূলক স্মৃতিচারণ। কারও কাছে এটি চেতনাপ্রবাহমূলক উপন্যাস। এক ঔপন্যাসিক বলেছেন, এটি কাব্যধর্মীমূলক প্রেমকাহিনি, অন্যজন বলেছেন সামাজিক উপন্যাস। কয়েকজন এটাকে আর্থ-সমাজিক প্রেক্ষাপটে বিধৃত ঐতিহাসিক উপন্যাস বলেও মন্তব্য করেছেন। বিখ্যাত একজন সমালোচকের ভাষায়, এটি উদ্দেশ্যমূলক কাহিনি উপন্যাস। লেখকের মতে, স্যমন্তক একটি জৈবন্তিক উপন্যাস। আমার মতে, এটি এখানে বর্ণিত সবধরণের উপন্যাসের সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যাষ্টিক উপন্যাস।  যেখানে সকল প্রকার উপন্যাসের স্বাদ একসঙ্গে পাওয়া যায়। এ যেন একের ভেতর অনন্ত। যে দিক দিয়ে বিবেচনা করা হোক না কেন, সব উপাদান দেখা যায় স্যমন্তকে। জেবিক বা সামাজিক বন্ধন ছাড়াও কীভাবে মানুষ রক্ত সম্পর্কের চেয়েও আপনজন হয়ে যায়, তার একটি চমৎকার দলিল স্যমন্তক।

অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ উপন্যাসটির মূল আকর্ষণ। প্রতিটি লাইনই মুখস্থ করে রাখার মতো ছুঁইয়ে যায় মন।
ড. মোহাম্মদ আমীন
ভালোবাসা-দ্রোহ, স্নেহ-প্রেম, স্বার্থিক দ্বন্দ্ব, মায়া-মমতা-অভিমান, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, পিতাপুত্র-পরিবার, ধর্ম-দর্শন-রাজনীতি, ইতিহাস-বিজ্ঞান, নগরজীবন, গ্রামীণজীবন, মূল্যবোধ, শিক্ষাব্যবস্থা, যোগাযোগ, প্রশাসন, দারিদ্র্য, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ, বিশ্বপ্রকৃতি এমনকি বস্তি হতে শুরু করে মনুষ্য জীবনের সঙ্গে জড়িত সবকটি বিষয় নিখুঁত মাধুর্যে বিধৃত হয়েছে। নামকরণ ও প্রচ্ছদ দুটোই হয়েছে অসাধারণ। এসব বিবেচনায় আমি বলতে পারি, স্যমন্তক একটি পরিপূর্ণ উপন্যাস।

উপন্যাসের চরিত্রসমূহ অধিকাংশ পাঠকের কাছে পরিচিত। তাই  লেখককে প্রতিটি সংলাপ খুব সাবধানে লিখতে হয়েছে। ঋদ্ধ সংলাপের সঙ্গে পরিশীলিত রসবোধ, উত্তম উদ্দেশ্য, ভাবনার প্রসারতা ও মানবতার স্ফূরণ উপন্যসটিকে অনবদ্য করে তুলেছে। জীবন থেকে নেওয়া ঘটনায় বিন্যস্ত এমন হৃদয়গ্রাহী পরিপূর্ণ উপন্যাস ইতোঃপূর্বে আমি পড়িনি। উদ্দেশ্য, কাহিনি, চরিত্র, বিষয়-বর্ণন, বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ, কাব্যিকতা, পরিশুদ্ধ জীবনবোধ, স্পর্শকাতর সম্পর্ক, মানবতার উৎকৃষ্ট-নিকৃষ্ট নিদর্শন ও পরিণতি বিবেচনায় বাংলা সাহিত্যে এমন আর কোনো উপন্যাস আছে বলে আমার জানা নেই। এটি হতে পারে বাংলা সাহিত্যের একটি শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।
-------------------------------------------------
বইটির প্রকাশক : পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
পাবেন : অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ২০০-২০১ নম্বর স্টলে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন