বুধবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৮

স্যমন্তক অভূতপূর্ব বাক্যবিন্যাস যুক্তিময় বিবর্ণন / শেখ জহির উদ্দিন


গবেষক Sheikh Zahir Uddin
------------------------------------
 গৌরচন্দ্রিকা : এদেশে এখন, সন্ধ্যার মায়াটা জড়িয়েই, ঘোষিত হয়েছে রাতের প্রথম প্রহর। শুভ সন্ধ্যা। শুভ রাত্রির প্রারম্ভিক প্রহর। নাই' বা মিললো ও' দেশের সাথে, শুভাশীষ তো! খন্ড অবসরের মাঝে মাঝেই, পড়ছিলাম ড. মোহাম্মদ অামীন রচিত ' স্যমন্তক'। ভূমিকাটাই ব্যতিক্রমী, টেনে- হিঁচড়েই গ্রন্থের ভেতরে নিয়ে যেতে পারে, ঠিক বন্ধু প্রমিতা দাশ লাবনীর প্রকাশের মত- যাঁর সূত্র ও সহায়তায়ই 'স্যমন্তক' কে জেনেছি, সংগ্রহ করেছি, পড়ছি। পড়তে গিয়ে মনে হলো, বই পড়ছি না, লেখককে শুনছি! শুনছি তাঁর প্রাণাবেগ- নিসৃত জীবনবোধকে! কারো জীবনবোধকে কেউ পড়তে পারে, শুনতে পারে, জানতাম না এমন নয় ; তবে, সচিত্রভাবেই যে পারে, জানলাম। সামান্যতেই বলা এটুকু। পড়ি, অতঃপর সীমাবদ্ধ জ্ঞানেই মন্তব্য করার দুঃসাহস করবো বই কি! মনে হচ্ছে, লাবনীর কথাই ঠিক্। একবার পড়ে জানা যাবে না বুঝা যাবে না! দুবার পড়ে বুঝবো' তো! এবার তাহলে শুরু করা যাক। ]


উপন্যাসে, ঘটনা পরস্পরায় নায়ক-নায়িকার যে বাঁধন কথার ফুলঝুরিতে, জীবনের দায়-দায়িত্ব বা চলমান জীবনবোধে, তাতে রবীন্দ্রনাথ বড়ো

বেশি লতায়িত! যেনো রবিঠাকুরকে প্রতিস্থাপন করার একটা তাড়না বা তাগিদ ছিল। ভালো লাগার বিষয়, তাতে প্রাসঙ্গিকতা ক্ষুন্ন হয়নি, ভারাক্রান্তও হয়নি। বড়ো লেখক বা কবির কাছে অামাদের দায়বদ্ধতা অনেক। সে দায়বদ্ধতা কখনো জীবনের প্রয়োজনে, কখনো প্রাণের দাবিতে। এক্ষেত্রে লেখক বিশ্বস্ত ছিলেন- মন থেকে, মনের গভীর থেকেও। মূল্যবোধের নিরিখে, উপন্যাসের বিষয়বস্তু ও দেদীপ্যমান মানবিকতা- সংশ্লিষ্ট সবই -বিচ্ছিন্ন, সামগ্রিক জীবন- জীবনবোধের সাথে তার সংযোগ কালে ভদ্রেই ঘটে। তবু অনস্বীকার্য যে, " জীবন জীবনের জন্য" বোধে, জীবনের সাথে তার বড়ো ধরণের বিরোধ নেই।
উপন্যাসের শেষের দিকে পড়তে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের 'বিষবৃক্ষ' উপন্যাসকে মনে পড়েছে। বঙ্কিম সেখানে বিধবার মনে সযত্নেই প্রেম জাগিয়েছেন, প্রেমের সুবাস ছড়িযেছেন। হঠাৎ তাঁর স্বধর্মের গোঁড়ামি অার সীমাবদ্ধতা মনে পড়তেই,
ড. মোহাম্মদ আমীন
ভীত-শঙ্কিত হয়ে সে বিধবাকে নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলেছেন তিনি! সংস্কারের কাছে বিসর্জন দিয়েছেন নিজের শিল্পীসত্বাকে! ' স্যমন্তক' উপন্যাসও অনেকটা তেমন। নায়িকার অভাবিত জাগরণসূত্রে নায়কের সম্পৃক্ততা ও অনুভবে যে লতায়িত প্রেম, তাকে বাস্তবসম্মত রুপদানে কী এক সীমাবদ্ধতা যেন! নায়িকার প্রতি তাঁর প্রেমের যে চিত্রপট উপন্যাসে,তাতে নায়িকাকে জীবন-সঙ্গী না করেও নায়কের বিয়ের সাথে নায়িকার সম্পৃক্ততা অারো হৃদয়ঘন ও ঘটনা-পরস্পরায় সম্পাদিত হতে পারত; তেমন হলেই নায়ক-নায়িকার প্রেম পরিশীলিত, সুবাসিত ও নন্দিত হতো। এখানে যেন লেখকের শিল্পীসত্বা সীমায়িত হয়েছে কী এক শঙ্কায়, একান্ত অনিচ্ছাতেই! জীবনকে সাজিয়েও তাকে তাড়িত হৃদয়ালোকে লেখক পরিনতি দেননি সজ্ঞানে! লেখকের শিল্পীমনের প্রতিচ্ছবি এখানে সঙ্কুচিত মনে হলো!
" স্যমন্তক" উপন্যাসটির বিশেষত্ব একাধিক ক্ষেত্রে। রাকখসনা- রাকু- রচনা তথা বস্তি-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এমন ক্রমবিকাশে প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধ ও উদার মানবিকতার পথে কাণ্ডারি মাত্রই হননি শ্রদ্ধেয় লেখক ও তাঁর সিনিয়র জনাব অাবদুল হামিদ খাঁন। সুপরিণতি দান করে
Sheikh Zahir Uddin
মূল্যবোধ ও মানবিকতাকে ফুলেল প্রবাহে চিরন্জীব করেছেন। প্রতিকুলতা ও ব্যস্ততার মাঝেও সয়েছেন সংশ্লিষ্ট ফুলটির অাজন্ম চিৎকারের যত প্রসব- বেদনা ও অান্দোলিত প্রকাশকে। সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ রাকখসনা- রাকু- রচনা" কেও। কারণ, স্রষ্টার অাকুতি-অাবেদনকে অন্তরমূলে ধারণ করে, তাকে মহিমান্বিত গতিময়তা দানে, স্বকীয় বোধ-তাড়নার দীপ্তালোকেই তিনি জাগরিত হয়েছেন, জাগরণ-পথেও ছড়িয়েছেন ফুলেল কটাক্ষ।



উপন্যাস মানে, জীবনের পূর্ণ অথবা খন্ডিত রুপায়ণ। সর্পিল গতিতে কোনো প্রধান চরিত্রকে কেন্দ্র করেই সে অায়োজন। একমাত্র দক্ষ ঔপন্যাসিকই পারেন, সে অায়োজনে বহুমাত্রিক সুবাস ছড়াতে। ' স্যমন্তক' এর ড. মোহাম্মদ অামীন' কে এক্ষেত্রে সশ্রদ্ধাতেই সাধুবাদ দিতে হয়। উপন্যাসটির গতি- প্রবাহে তিনি, জীবনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম স্বরুপ উন্মোচন করেছেন- অভূতপূর্ব বাক্যবিন্যাস অার অকাট্য যুক্তিময়তার সরল প্রতিস্থাপনে! উদাহরণস্বরুপ অজস্র- অনেকের একটি- 'শ্রদ্ধা পদগামী, কিন্তু ভালবাসা অন্তর্গামী, অাপাদমস্তকে সমানভাবে ছড়িয়ে, এজন্য মাথা নুইয়ে শ্রদ্ধা, ভালবাসা জানাতে হয় অন্তরে অন্তরে নিবিড় মমতায়'। 
(অসমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন